Loading
অর্থনীতির বড় চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়ে আমরা ২০২৪-এ প্রবেশ করছি। নতুন অর্থবছরের শুরুতে ব্যালান্স অব পেমেন্ট, ডলারের বিনিয়ম মূল্য ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আগামী কয়েক মাস ব্যাপক চাপের মুখে থাকবে। এটি মাথায় রেখে আমাদের সামনের দিকে এগোতে হবে।
এখানে আমাদের একটা আশার জায়গা হলো, আমাদের যে রপ্তানি বাজার আছে, ২০২৪ সালে সেখানে চাহিদা বাড়ার কথা।
এটি হলে তা হবে আমাদের জন্য বড় আশার আলো। রপ্তানি বাজারের কথা মাথায় রেখে টাকার যে অবমূল্যায়ন হয়েছে তা ধাপে ধাপে সমন্বয় না করে একবারে সমন্বয় করা সম্ভব হলে প্রবাসীদের মধ্যে আস্থার জায়গা তৈরি হবে। তখন প্রবাস আয়ও বাড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
পাশাপাশি ডলারের অস্বাভাবিক চাহিদা কমাতে হবে।
সেই সঙ্গে ব্যাংকিং খাতের যে ক্যান্সার (হুন্ডি) তা একেবারে বন্ধ করতে হবে। ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা আনার জন্য পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। খেলাপি ঋণ কমিয়ে প্রভাব খাটিয়ে ঋণ নেওয়া ও দেওয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
টাকার অবমূল্যায়ন ও ডলারের সংকটের কারণে হয়তো আমদানি নিষেধাজ্ঞা আরো কিছুদিন থাকবে, যার প্রভাব মূল্যস্ফীতিতে এরই মধ্যে পড়ছে, সামনে আরো পড়বে।
বছরের শুরুর তিন থেকে চার মাস হয়তো অর্থনীতিতে চাপ থাকবে। এটা সামলানোর জন্য ঋণের সুদহার বাড়ানোর যে আংশিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। এর সঙ্গে এ বছর সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে যে সমস্যাগুলো চলছে, আইএমএফ এককভাবে তা সমাধান করতে পারবে না। তারা সমস্যা সমাধানে আমাদের কিছুটা সহযোগিতা দেবে মাত্র।
আমাদের সমস্যাগুলোকে আমাদেরই সমাধান করতে হবে। যেমন—ব্যাংক থেকে প্রভাব খাটিয়ে ঋণ নেওয়া, এটি কিন্তু আইএমএফ এসে সমাধান করে দেবে না। এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের সমাধান করতে হবে। আবার মূল্যস্ফীতির জন্য অনেকে ব্যবসায়ীদের বাজার নিয়ন্ত্রণকে দায়ী করছে। এখানে খুব কঠোর হস্তক্ষেপ দরকার। এই সমস্যার সমাধান তো আইএমএফ করে দেবে না।
বিদেশি বিনিয়োগ আশা নির্ভর করবে দেশের অর্থনীতির আত্মবিশ্বাসের ওপর। এটির কিছু নিয়ামক রয়েছে, সেগুলোর উন্নয়ন হলে বেশ কিছু বিনিয়োগ আসতে পারে। দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য আমাদের ব্যাপক সাহসী সংস্কার আনতে হবে এবং খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তা করতে হবে। ২০২৪ সাল হওয়া উচিত অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরত আনার বছর। এখানে প্রবৃদ্ধি বা উচ্চ প্রবৃদ্ধি কোনো বিষয় নয়।
লেখক : মাশরুর রিয়াজ, চেয়ারম্যান, পলিসি এক্সচেঞ্জ ও সাবেক জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বিশ্বব্যাংক গ্রুপ