Loading
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, একটি দেশের সত্যিকারের পরিচয় হলো সে দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতি। আজকে সেই সত্যিকারের শিক্ষা- সংস্কৃতি ও ইতিহাস থেকে আমাদের কমলমতি বালক-বালিকাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার কাজ চালানো হচ্ছে। আমাদের উচিত এখন জাতির সামনে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা। সেজন্য কাজ করতে হবে।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘শিক্ষা ব্যবস্থায় বিজাতীয় আগ্রাসন’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রফেশনালস মুভমেন্ট অব বাংলাদেশ ওই সেমিনারের আয়োজন করে। এতে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের বিভিন্ন দিক আলোচনায় আসে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম। মূল প্রবন্ধে অভিযোগ করা হয়, আওয়ামী লীগ শুধু ইতিহাস বিকৃতি ঘটায়নি, পাঠ্যপুস্তকেও দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে গুরুত্ব না দিয়ে বিজাতীয় বিষয়াদি প্রাধান্য দেয়। প্রতিবাদ সত্ত্বেও প্রতিবছর নতুন বই প্রণয়ন করতে গিয়ে সরকার নতুন নতুন ষড়যন্ত্র করছে।
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, বাংলাদেশের সরকার দেশ শাসন করে না। তারা বসে বসে ইতিহাস লেখে। কিন্তু সেটা সত্যিকারের ইতিহাস নয়, সেটা কাল্পনিক ইতিহাস। আজকের যে পাঠ্যবইয়ের সমস্যা তা আসলে পাঠ্যবইয়ের সমস্যা না। পাঠ্যবইয়ের প্রথম পৃষ্টায় যে ছবি রয়েছে সেটি বাংলাদেশের কোথাও কি দেখা যায়? যদি না দেখা যায় তবে এটি আমাদের কমলমতি ছেলে-মেয়েদের মধ্যে কিভাবে গেলো?
তিনি বলেন, একটি দেশের পরিচয় শুধু উন্নয়ন দিয়ে হয় না। অথবা উন্নয়নের নামে দূর্নীতি দিয়েও একটি দেশের পরিচয় হয় না। বাংলাদেশের একটি শিশু যখন স্কুল - কলেজে যাবে তখন তাকে মুক্তচিন্তা করার সুযোগ করে দিতে হবে। তার সামনে সব তথ্য তুলে ধরতে হবে। এর ফলে সে যখন বড় হবে তখন সে নিজেই বুঝতে পারবে কোনটা করা ঠিক হবে আর কোনটা করা বেঠিক হবে। আমরা কেন এখন থেকে তাকে বলি যে সে কি করবে? সরকার এখন একটা ছোট শিশুর মধ্যে বিষ ঢুকিয়ে দেওয়ার কাজ করছে।
সঠিক ইতিহাস লেখার জন্য কমিটির প্রস্তাব করে মঈন খান বলেন, আমরা কি পারি না এখানে ১০-১৫ জনের একটি কমিটি করে সঠিক ইতিহাস লিখে সেটি গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে দিতে। আমরা চাইলেই এটি করতে পারি। আমি চাই আমরা ৩-৪ মাসের মধ্যে সঠিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি আমাদের ছেলে - মেয়েদের সামনে তুলে ধরতে। আমরা যদি শিক্ষার আদর্শ বিশ্বাস করি, মানবতার আদর্শ বিশ্বাস করি তাহলে আসুন সেই পথে অগ্রসর হই। হিংসার রাজনীতি পরিত্যাগ করে একটা ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে সামনে অগ্রসর হই।
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, যখন বইগুলো ছাপানো হয় তখন আমাদের প্রতিবাদ করা উচিত ছিল। প্রতিবাদ এমন একটি জিনিস সেটা সব সময় করে যেতেই হবে। প্রতিবাদ করলে সমাধান হয়, আবার সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই প্রতিবাদকে চালিয়ে যেতে হয়।
তিনি বলেন, যারা স্বৈরাচারী, যারা ক্ষমতায় লিপ্স, যারা মানুষের অধিকার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে তারা কিন্তু বারবার পৃথিবীর ইতিহাসে আত্মমোচন করেছেন। তবে একটি কথা মনে রাখতে হবে তারা কিন্তু চিরস্থায়ী হয়নি। কেউ হয়তো ৫ বছর, ২০ বছর ৩০ বছর বা ১০০ বছর থেকেছে। কিন্তু একসময় না একসময় তাদেরকে বিতারিত হতে হয়েছে। কাজেই সে কথাগুলো মনে রেখেই আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। প্রতিবাদ আমাদের করেই যেতে হবে।
শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন, অধ্যাপক তাজমেরী এসএ ইসলাম, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহ্সহ শিক্ষাবিদ ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ।