
হেপাটাইটিস সংক্রমণ, চিকিৎসা, প্রতিরোধ ইত্যাদি নিয়ে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে মানুষের, যা নিতান্তই অজ্ঞতাবশত এবং এসবের কোনো ভিত্তি নেই। এমন কিছু ভুলের শুলুক-সন্ধান করে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ভুল : কবিরাজি বা হোমিও চিকিৎসায় হেপাটাইটিস ভালো হয়।
গ্রামগঞ্জে, এমনকি শহরাঞ্চলেও এসব নিয়ে মারাত্মক ভুল ধারণা রয়েছে অনেক মানুষের। আসলে কবিরাজি, হোমিও, আয়ুর্বেদিক, ঝাড়ফুঁক, পানি পড়া, তেল পড়া—এসবে হেপাটাইটিস কখনো ভালো হয় না। এসবের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং এসব অপচিকিৎসায় অন্যান্য রোগ বাসা বাঁধতে পারে। তাই এসব বিষয়ে নিজে সচেতন হয়ে অন্য মানুষকেও সচেতন করা উচিত।
ভুল : সামাজিক মেলামেশায় হেপাটাইটিস ‘সি’ ছড়ায়।
অনেকের ধারণা, হেপাটাইটিস ‘সি’তে আক্রান্ত রোগীদের সঙ্গে সামাজিক মেলামেশায় এই ভাইরাসে অন্যরাও আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু এটি ভুল ধারণা। হ্যান্ডশেক, কোলাকুলি বা এ ধরনের অন্য সামাজিক মেলামেশায় হেপাটাইটিস ‘সি’ ছড়ায় না। এমনকি রোগীর ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, যেমন—প্লেট, গ্লাস, চামচ, জামাকাপড়ের মাধ্যমেও এ রোগ ছড়ায় না। শুধু যেসব দ্রব্য রোগীর রক্তের সংস্পর্শে আসে, যেমন—ক্ষুর, ব্লেড, রেজর, টুথব্রাশ, সুচ ইত্যাদির মাধ্যমে হেপাটাইটিস ‘সি’ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে।
ভুল : হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস ছোঁয়াচে।
অনেকে মনে করেন, হেপাটাইটিস ‘বি’ হলে ওই রোগীর সঙ্গে বোধ হয় মেলামেশা করা যাবে না। তাতে এই ভাইরাস ছড়িয়ে যাবে। এ ধারণা সঠিক নয়। কারণ হেপাটাইটিস ‘বি’ কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। রক্তের সংস্পর্শ ছাড়া এটি ছড়ায় না।
ভুল : হেপাটাইটিস ‘সি’ সংক্রমিত মায়ের দুধ পানে শিশুর ক্ষতি হয়।
অনেকে আশঙ্কা করেন যে দুগ্ধবতী মায়ের হেপাটাইটিস ‘সি’ থাকলে এবং তার দুধ পান করলে সন্তানেরও হয়তো ক্ষতি হবে। এ আশঙ্কা সঠিক নয়। সংক্রমিত মায়ের দুধ পানে হেপাটাইটিস ‘সি’ সংক্রমণের কোনো আশঙ্কা নেই। তা ছাড়া হেপাটাইটিস ‘সি’ আক্রান্ত গর্ভবতী মা থেকেও সন্তানের হেপাটাইটিস ‘সি’ সংক্রমণের পরিমাণ খুব কম (সাধারণত ৫ শতংশেরও কম)।
ভুল : ইপিআইএর হেপাটাইটিস ভ্যাকসিন নিলেই চলবে।
আমাদের দেশে ইপিআইএর মাধ্যমে হেপাটাইটিস ‘বি’ ভ্যাকসিন ডিপিটির সঙ্গে নবজাতকের জন্মের ষষ্ঠ সপ্তাহে দেওয়া হচ্ছে। অনেকে মনে করেন, এতেই হেপাটাইটিস থেকে মুক্ত থাকা যাবে। কিন্তু এখানে বেশ বড় ভুল হচ্ছে।
হেপাটাইটিস ‘বি’ সংক্রমণের প্রধান কারণ হচ্ছে, একই ভাইরাসে আক্রান্ত গর্ভবতী মা থেকে তাঁর নবজাতকের শরীরে সংক্রমণ, যাকে ভার্টিক্যাল ট্রান্সমিশন বলে। এই সংক্রমণ বন্ধ করতে হলে নবজাতককে জন্মের সঙ্গে সঙ্গে (২৪ ঘণ্টার মধ্যে) হেপাটাইটিস ‘বি’র ভ্যাকসিন এবং ইম্মোনোগ্লোবিউলিন দিতে হয়। উন্নত দেশে এ নিয়মই ফলো করা হচ্ছে।
এ কথা মনে রাখতে হবে, যত বেশি বার্থডোজ কার্যকর হবে, তত বেশি হেপাটাইটিস কন্ট্রোল সম্ভব হবে। শুধু জন্মের ষষ্ঠ সপ্তাহে দিলে বরং হেপাটাইটিসে আক্রান্ত মায়েদের সন্তানরা রক্ষা পাবে না। তাই এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করে গর্ভাবসস্থায় সব মায়ের স্ক্রিনিং করে জন্মের পরপরই ভ্যাকসিন দেওয়া যুক্তিযুক্ত।