“হাদীস শরীফে রয়েছে যে, মানবাত্মা যখন দেহ পিঞ্জর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, তখন আকাশমন্ডল থেকে অতি উচ্চঃস্বরে তিনবার ডেকে প্রশ্ন করা হয়, . “হে আদমসন্তান! বল, তুমি কি পৃথিবীকে পরিত্যাগ করে এসেছো, না পৃথিবী তোমাকে পরিত্যাগ করেছে? আর তুমি কি পৃথিবীকে অর্জন করেছিলে, না পৃথিবী তোমাকে অর্জন করেছিল? আর হে বান্দা! পৃথিবী কি তোমাকে গ্রহন করেছিল, নাকি তুমিই আল্লাহতায়ালাকে বিস্মৃত হয়ে পৃথিবীকে গ্রহন করেছিলে?”আবার যখন গোসল দেওয়ার জন্য স্নানের জায়গায় রাখা হয় তখনও গগনমন্ডল থেকে তিনবার উচ্চঃস্বরে আওয়াজ দিয়ে বলা হয় – “ওহে আদম সন্তান! তোমার যেই শক্তিমান দেহবল্লরী এখন কোথায়? আর কে-ই বা তোমাকে এত দুর্বল ও অসহায় করেছে? আর তোমার সেই বাকপটু জিহ্বা আজ কোথায়? এখন কেন তুমি নির্বাক হয়ে পড়ে রয়েছো; আর তোমার সেই তীব্র শ্রবণেন্দ্রীয় কর্ণদ্বয়কে এমন বধির করেছে কে? আর কেইবা নিষ্ঠুরের মত তোমাকে স্বীয় বন্ধু-বান্ধব থেকে পৃথক করে দিয়েছে? . তারপর যখন কাফন পরানো হয়, সেই সময়েও আকাশমন্ডল থেকে তিনবার অতি উচ্চঃস্বরে ডাক দিয়ে বলা হয় – “হে আদম সন্তান!তুমি যদি বেহেশতি বান্দা হয়ে থাক, তাহলে সুসংবাদের কথাই বটে, কিন্তু তুমি যদি দোযখী বান্দা হয়ে থাক, তাহলে তোমার জন্য শত আক্ষেপ। আর হে আদম সন্তান! তোমার প্রতি যদি আল্লাহপাক সন্তুষ্ট ও রাজী থাকেন, তবেই অতি উত্তম; কিন্তু আল্লাহ তায়ালা যদি তোমার প্রতি ক্রোধান্বিত হয়ে থাকেন, তবে এর পরিণাম অত্যান্ত ভয়াবহ।” আর তৃতীয়বার বলা হয়, “ওহে আদম সন্তান! তুমি এখন এক দুর্গম ও কন্টকাকীর্ণ পথে যাত্রা করবে। তুমি চিন্তা করেছ কি? আর সেই দুর্গম পথের সম্বল তোমার আছে কি? আজ তুমি সুখ-সজ্জা পরিত্যাগ করে অতি বিপদ-সঙ্কুল ভয়ঙ্কার স্হানে গমন করবে, কিন্তু কখনও আর ফিরে আসতে পারবে না।” . আবার যখন মৃতব্যাক্তিকে খাটের ওপর রাখা হয়,তখন পূর্বের ন্যায় তিনবার ঘোষণা করা হয় – ‘ওহে আদম সন্তান! যদি তুমি পুণ্যবান হয়ে থাকো, তাহলে তোমার জন্য সুসংবাদ। আর দুষ্কর্মশীল হলে তোমার উদ্দেশ্যে রয়েছে দুঃসংবাদ; কিন্তু তুমি যদি আল্লাহপাকের রেজামন্দি হাসিল করে থাক এবং তওবা করে থাক, তাহলে খুব উত্তম করেছো। এছাড়া তোমার পরিণাম অত্যান্ত মন্দ হবে। অতঃপর যখন খাটকে জানাযার নামাযের জন্য সারিবদ্ধ কাতারের সম্মুখে রাখা হয়, তখন আবার আগের মত ঘোষণা করা হয় -হে আদম সন্তান! তুমি তোমার জীবনের ভাল-মন্দ যা কিছু সম্পন্ন করেছ, এখন সবকিছু প্রত্যক্ষ করবে। যদি সৎভাবে পূন্য সঞ্চয়ের মধ্য দিয়ে নিজ জীবনকে অতিবাহিত করে থাক, তবে তোমার জন্য রয়েছে সুসংবাদ; কিন্তু যদি মন্দভাবে পাপের স্রোতে গা ভাসিয়ে জীবনকে অতিবাহিত করে থাক, তবে তোমার ধ্বংস অবধারিত।”অতঃপর মৃত ব্যাক্তিকে যখন কবরের পাশে রাখা হয়, তখন কবর তাকে তিনবার প্রশ্ন করে – “ওহে আদম সন্তান! একদিন আমার ওপর দিয়ে পরমানন্দে হেসে-খেলে বেড়িয়েছো, এখন কেঁদে কেঁদে আমার অভ্যন্তরে প্রবেশ কর। আর এক কালে আমার পৃষ্ঠদেশে কত আনন্দ ও উৎফুল্ল হৃদয়ে সময় অতিবাহিত করেছিলে, কিন্তু এখন চিন্তিতাবস্হায় আমার মধ্যে প্রবেশ কর, আর এককালে তুমি বেশ বাকপটু ছিলে কিন্তু এখন নির্বাক ও বিমর্ষ চিত্তে আমার অভ্যন্তুরে দাখিল হও।”তারপর দাফন কাফন সম্পাদন করে লোকজন যখন নিজ নিজ গন্তব্যস্হলে চলে যায়, তখন পরম কৌশলী আল্লাহ তায়ালা বলেন –“ওহে আমার প্রীয় বান্দা! আজ তুমি নির্জন কবরের মাঝে ঘোর অন্ধকার বন্ধু-বান্ধব ও দোসরহীন একা একা পড়ে রয়েছ। আত্মীয়-স্বজন সকলেই তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে ; কিন্তু একসময় তুমি তাদের জন্য আমার বিধি নিষেধের গন্ডি অতিক্রম করে পাপকাজে পরিলিপ্ত হয়েছিলে এবং আমাকে ভুলে গিয়েছিলে। হে বান্দা! আজ এই দুর্দিনে তোমার প্রতি আমি অত্যান্ত দয়ালু হব ও মেহেরবান হব। যা দেখে আমার সৃষ্ট জীবসকল বড়ই আশ্চার্যান্বিত হয়ে পড়বে। হে বান্দা! জেনে রাখ, মাতা সন্তানের প্রতি কতটুকু স্নেহশীল ও মমতাময়ী হয়ে থাকে, আমি আমার বান্দার জন্য তদাপেক্ষাও অধিক স্নেহশীল ও দয়ালু।”বিষয়ভিত্তিক কুরআনের আয়াত: মৃত্যুর বর্ণনাআল্লাহ্ সুবহানওয়া তা’আলা বলেন: ১. “প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর কিয়ামতের দিন তোমাদের পরিপূর্ণ বদলা দেওয়া হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সেই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ধোঁকার বস্তু ছাড়া কিছুই নয়।” -(সূরা আল ইমরান, আয়াত: ১৮৫)২. “প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।” -(সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৩৫)৩. “তোমরা যেখানেই থাক না কেন; মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দূর্গের ভেতরেও অবস্থান কর, তবুও।…” -(সূরা আন নিসা, আয়াত: ৭৮)৪. “হে ঈমাণদারগণ! তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা কাফের হয়েছে এবং নিজেদের ভাই বন্ধুরা যখন কোন অভিযানে বের হয় কিংবা জিহাদে যায়, তখন তাদের সম্পর্কে বলে, তারা যদি আমাদের সাথে থাকতো, তাহলে মরতোও না আহতও হতো না। যাতে তারা এ ধারণা সৃষ্টির মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের মনে অনুতাপ সৃষ্টি করতে পারে। অথচ আল্লাহই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দেন। তোমাদের সমস্ত কাজই, তোমরা যা কিছুই কর না কেন, আল্লাহ সবকিছুৃই দেখেন।” -(সূরা আল ইমরান, আয়াত: ১৫৬)৫. “তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা মৃত্যুর ভয়ে নিজেদের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন? অথচ তারা ছিল হাজার হাজার। তারপর আল্লাহ তাদেরকে বললেন মরে যাও। তারপর তাদেরকে জীবিত করে দিলেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের উপর অনুগ্রহকারী। কিন্তু অধিকাংশ লোক শুকরিয়া প্রকাশ করে না।” -(সূরা বাকারাহ্, আয়াত: ২৪৩)৬. “বলুন, তোমরা যে মৃত্যু থেকে পলায়নপর, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের মুখামুখি হবে, অতঃপর তোমরা অদৃশ্য, দৃশ্যের জ্ঞানী আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন সেসব কর্ম, যা তোমরা করতে।” -(সূরা আল জুমুআহ, আয়াত: ৮)৭. “যখন তাদের কারও কাছে মৃত্যু আসে, তখন সে বলেঃ হে আমার পালণকর্তা! আমাকে পুনরায় (দুনিয়াতে ) প্রেরণ করুন।যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি, যা আমি করিনি। কখনই নয়, এ তো তার একটি কথার কথা মাত্র। তাদের সামনে পর্দা আছে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত।” -(সূরা আল মুমিনুন, আয়াত: ৯৯-১০০)৮. “যেদিন তারা ফেরেশতাদেরকে দেখবে, সেদিন অপরাধীদের জন্যে কোন সুসংবাদ থাকবে না এবং তারা বলবে, কোন বাধা যদি তা আটকে রাখত।” -(সূরা আল ফুরকান, আয়াত: ২২)৯. “ফেরেশতা যখন তাদের মুখমন্ডল ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করতে করতে প্রাণ হরণ করবে, তখন তাদের অবস্থা কেমন হবে?” -(সূরা মুহাম্মদ, আয়াত: ২৭)১০. “আর যদি তুমি দেখ, যখন ফেরেশতারা কাফেরদের জান কবজ করে; প্রহার করে, তাদের মুখে এবং তাদের পশ্চাদদেশে আর বলে, জ্বলন্ত আযাবের স্বাদ গ্রহণ কর।” -(সূরা আল আনফাল, আয়াত: ৫০)১১. “ফেরেশতারা তাদের জান এমতাঅবস্থায় কবজ করে যে, তারা নিজেদের উপর যুলুম করেছে। তখন তারা অনুগত্য প্রকাশ করবে যে, আমরা তো কোন মন্দ কাজ করতাম না। হ্যাঁ নিশ্চয় আল্লাহ সববিষয় অবগত আছেন, যা তোমরা করতে। অতএব, জাহান্নামের দরজসমূহে প্রবেশ কর, এতেই অনন্তকাল বাস কর। আর অহংকারীদের আবাসস্থল কতই নিকৃষ্ট।” -(সূরা নাহল, আয়াত: ২৮-২৯)১২. “নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, তোমরা ভয় করো না, চিন্তা করো না এবং তোমাদের প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ শোন।” -(সূরা হা-মীম সিজদাহ্, আয়াত: ৩০)১৩. “ফেরেশতা যাদের জান কবজ করেন তাদের পবিত্র থাকা অবস্থায়, এই বলে যে, তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। তোমরা যা করতে, তার প্রতিদানে জান্নাতে প্রবেশ কর ।” -(সূরা নাহল, আয়াত: ৩২)১৪. “হে প্রশান্ত মন, তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে।” -(সূরা আল ফজর, আয়াত: ২৭-২৮)১৫. “প্রত্যেক ব্যক্তির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন।” -(সূরা মুনাফিকুন, আয়াত: ১১)উপরের আয়াতসমূহে আল্লাহ্ সুবহানওয়া তা’আলা আমাদেরকে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন এবং কাফিরদের মৃত্যুযন্ত্রণা ও মুমিনদের সুসংবাদও প্রকাশ করে দিচ্ছেন । আল্লাহ্ আমাদের আত্মাকে পবিত্র করুন এবং আপনার সন্তোষভাজন হওয়ার যোগ্যতা দান করুন । আমীন ।[বি:দ্র: এই বিষয়ে পবিত্র কুরআন মাজীদে আরও আয়াত রয়েছে এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত বিস্তারিত হাদীসও রয়েছে।]
Post Top Ad
Wednesday, January 24, 2018
‘কুললু নাফসীন জায়কাতুল মউত’
Post Top Ad
Responsive Ads Here
Author Details
Templatesyard is a blogger resources site is a provider of high quality blogger template with premium looking layout and robust design. The main mission of templatesyard is to provide the best quality blogger templates which are professionally designed and perfectlly seo optimized to deliver best result for your blog.